আদমদীঘিতে ডাঙ্গায় বেদের অস্থায়ী বসতি

প্রকাশ : 2022-05-09 19:16:04১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

আদমদীঘিতে ডাঙ্গায় বেদের অস্থায়ী বসতি

বেদে মানে ভ্রমণশীল বা ভবঘুরে। তারা একদল রহস্যময় মানুষ। এরা মূলত আমাদের দেশে ‘বাদিয়া’ বা ‘বাইদ্যা’ নামে পরিচিত একটি ভ্রাম্যমাণ জনগোষ্ঠী। মানবেতর জীবন-যাপন করা এই মানুষগুলোর একটাই পরিচয় তারা ‘বেদে’। দেশের বিভিন্ন অ লভেদে তাদের একেক নাম আর বেঁচে থাকার জন্য বিচিত্রসব পেশা। যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়ায় তারা দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। নর-নারী, শিশুর অদ্ভুত তাদের চেহারা, অদ্ভুত তাদের কথাবার্তা। নদী নির্ভর বাংলাদেশে বেদেদের একমাত্র বাহন হলো নৌকা। নৌকায় সংসার, আবার নৌকা নিয়েই দেশ-দেশান্তরে ঘুরে বেড়ানো। বেদেরা জীবনকে একঘরে রাখতে চায় না। তারাও প্রকৃতির ভালোবাসাকে স্বীকার করে এই সুন্দর পৃথিবীতে সমাজের মানুষের সাথে মিলেমিশে বেঁচে থাকতে চায়। প্রকৃতির মধ্যেই এরা জীবনের বৈচিত্রের সন্ধান খোঁজে। বেদেদের এই সন্ধানই আমাদের লোকসাহিত্যেও অন্যতম উপজীবি অংশ বেদে স¤প্রদায়। বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বৈচিত্রময় ও সমস্যাসঙ্কুল হলো বেদে স¤প্রদায়ের জীবন। মূলত তাদের প্রধান কাজ হলো কখনো তাবিজ-কবজ বিক্রি করা আবার কখনো বা সাপের খেলা দেখানো। খুব অবাক হলেও সত্যি, বেদেদের একমাত্র উপার্জনের পথ বলতে তাবিজ-কড়ি বিক্রি ও সাপের খেলা দেখানোই। কিন্তু দেশে বর্তমান আধুনিকতার ছোঁয়ায় তাদের তাবিজ-কবজ ও সাপের খেলা দেখানো অনেকাংশে কমে গেছে। তবে গ্রামে গঞ্জে তাদের এখনো মাঝে মধ্যে দেখা মিলে।

সরজমিনে জানা যায়, বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার পোঁওতা রেলগেট সংলগ্ন এলাকার একটি পরিতাক্ত জায়গায় দীর্ঘ প্রায় ১৫/২০ বছর যাবৎ ১০টি ঝুপড়ি দিয়ে আস্তানা গেড়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ১৫ জন পুরুষ ও ২০ জন শিশু ও মহিলা রয়েছে। তারা দেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার লহজং থানার কোমারভোগ ইউনিয়নের ফড়িয়া গ্রাম থেকে এসেছে। কিন্তু আগের মত তাদের কাছ থেকে কেউ আর খেলা দেখতে বা তাবিজ-কবজ নিতে চায় না। সারাদিন ঘুরে ফিরে যা পায় তা দিয়ে কষ্টের মাঝে দিনাতিপাত করতে হয়। তাই এখানে বসবাসরত সকল বেদে সদস্যদের মাঝে দেখা দিয়েছে নিশ্চিয়তার ছায়া। তারা এখন কি খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করবে। তবে তারা সরকারি সহায়তা কামনা করেছে। আবার এদের মধ্যে যারা দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করছে তারা অনেকে এখানকার ভোটারও হয়েছেন। কিন্তু তারা পায়নি কোন সমাজিক ও নাগরিক অধিকার। এই গোত্রের সদস্যরা সবাই মুসলমান। তাদের বসবাসের ঝুপড়িতে নেই কোন বৈদ্যুতিক আলো বা ফ্যানের ব্যবস্থা। এমনকি তাদের কোন পয়নিঃস্কাশনের ব্যবস্থাও নেই। 

পোঁওতা এলাকায় বসবাসরত বেদে পল্লীর প্রধান জাকির হোসেন জানান, পদ্মা নদীর ভাঙনে তাদের ভিটামাটি নিচিহ্ন হয়ে গেছে। তাই বছরের পর বছর তারা যাযাবরের মত এই এলাকায় চলে এসে আশ্রয় নেয়। তাবিজ-কবজা, সাপের খেলা দেখানো কমে গেছে তাই তারা টোটকা জাতীয় ওষুধ বিক্রি করে ছেলে-মেয়ের নিয়ে অতিকষ্টে জীবিকা নির্বাহ করছি। তিনি আরোও বলেন, সরকার যদি আমাদের এখানকার স্থায়ী বসবাসের জন্য সরকারি কোন জমি দান বা সরকারি বাড়ি বরাদ্দ দেয় তাহলে খুবই উপকার হতো।

বেদে পল্লীর সেলিম উদ্দীন জানান, স্থায়ীভাবে আমাদের কোথাও থাকা হয়না বলে তেমন লেখাপড়া করা হয়নি আমাদের। জন্মের পর থেকে যাযাবরের মত জীবন আমাদের। তিনি বলেন, আমরা যেখানেই যাই না কেন, কোন মেম্বার, চেয়ারম্যান আমাদের খোঁজ নেয় না। আগের মত টোটকা ওষুধও কেউ নিতে চায় না। আমরা খুবই অবহেলিত সম্প্রাদায়।

বেদে পল্লীর সালমা আক্তার জানান, আমি ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। আমি আরোও পড়াশুনা করতে চাই। মানুষের মত মানুষ হতে চাই। 

এ ব্যাপারে আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্রাবণী রায়ের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আদমদীঘি এলাকায় বেদে সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে তা আমার জানা নেই। তবে তারা যদি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে তাহলে আমরা সরকারি ভাবে সহযোগিতা করবো বলে আশ্বাস প্রদান করেন।