আদমদীঘিতে জাল দলিলে নামজারি, সাব-রেজিস্টারের মামলায় প্রতারক জেলে
প্রকাশ : 2025-03-15 18:49:43১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার কুসুম্বী মৌজায় সরকারি খাস সম্পত্তি প্রতারনা ও জাল দলিল সৃষ্টি করে সম্প্রতি ই-নামজারী করার পর ওই সম্পত্তি তিন পুত্রের নামে হস্তান্তর করতে গিয়ে আদমদীঘি সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে আটক হওয়া ঘটনা ঘটেছে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারী আদমদীঘি সাব-রেজিস্ট্রার মুদাচ্ছির হাসান বাদী হয়ে দলিল দাতা আব্দুর রহমান, দলিল লেখক রুহুল আমিন (লাইঃ ১১৪) সহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে আদমদীঘি থানায় সরকারি সম্পত্তি প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাতের মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহমান বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন। আব্দুর রহমান উপজেলা সদরের কুসুম্বী গ্রামের শুকচাঁনের ছেলে। এদিকে জাল দলিল ও কাগজপত্র দিয়ে নামজারি মঞ্জুর করা হলেও এই কাজে জড়িত বা ভূমি অফিসের কাউকে এ মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়নি এমন প্রশ্ন জনমনে। এই জাল দলিল ও নামজারি বিষয়ে অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে কারা কারা জড়িত তা উদঘাটন করার দাবী জানিয়েছেন এলাকার সচেতনমহল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি আদমদীঘি উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) অফিসে একখানা জাল দলিল (সার্টিফাইড কপি) দিয়ে কুসুম্বী মৌজার গত ২০২৪ সালের ১৬ নভেম্বর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা সুলতানা কর্তৃক স্বাক্ষরিত একখানা ১৩৩০ (৯-১) ২০২৪-২০২৫ নং নামজারি কেস মঞ্জুর হয়। যাহার নামজারি খতিয়ান নং- ৮৫০ এবং ৮৩৯ নং হিসাব খুলে ভূমি উন্নয়ন কর হাল সন পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়। উক্ত নামজারি খতিয়ান সহ জাল সার্টিফাইড দলিল নিয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারী দাতা সরকারি সম্পত্তি তার তিন পুত্রকে হস্তান্তর করবে মর্মে আদমদীঘি সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে যায়। জমি দাতার সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দাখিলকৃত কাগজপত্র সাব-রেজিষ্ট্রারের সন্দেহ হলে তিনি অধিকত্বর যাচাইয়ের মাধ্যমে দলিলটি জাল সনাক্ত হলে সাব-রেজিষ্ট্রার উক্ত দাতাকে আটক করে থানা পুলিশে হস্তান্তর করেন।
মামলা সুত্রে জানা যায়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার বিকালে আদমদীঘি সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিল রেজিষ্ট্রি করাকালীন ১নং বিবাদী আব্দুর রহমান সরদার একটি হেবা ঘোষনা দলিল তার তিন পুত্রের নামে দলিল রেজিষ্ট্রি করে দেওয়ার জন্য সাব-রেজিষ্ট্রারের এজলাসে দাখিল করে। দলিলের শুনানির পরে কাগজপত্র পর্যালোচনা কালে ১নং বিবাদীর দাখিলকৃত ২টি দলিলের জাবেদা নকলের ফটোকপি যাহার দলিল নম্বর যথাক্রমে ২৯৯৮/০৫, ২৯৯৯/০৫ বিষয়ে সাব-রেজিষ্ট্রারের সন্দেহ হয় এবং প্রাথমিক অবস্থায় সার্টিফাইড কপিতে প্রদত্ত স্বাক্ষর সঠিক নয় বলে সন্দেহ হলে অফিসের রেকর্ড রুমে সংরক্ষিত যে বালামে দলিল দুইটি লিপিবদ্ধ হয়েছে তাহা পর্যালোচনা করে দেখতে পাই ১নং বিবাদী আব্দুর রহমান কর্তৃক সরবরাহকৃত সার্টিফাইড কপির ফটোকপিতে উল্লেখিত দাগ নম্বর হাল ৬৭৭ যাহা মূল বালামে লিপিবদ্ধ হাল দাগ নম্বর ৬৭৯। যাহা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ১নং বিবাদীর দাখিলকৃত দলিল আরোও পর্যালোচনা করে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট ৬৭৭ নম্বর দাগ যাহা খ-তফশিলভুক্ত ১/১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত। মামলার বিবাদীগণ পরস্পর যোগসাজসে ও পরিকল্পিত ভাবে প্রতারণার উদ্দেশ্যে নিজ মালিকানাধীন হাল দাগ নম্বর ৬৭৯ পরিবর্তন করিয়া সরকারি ‘খ’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তি হস্তগত করার কুট-কৌশল করে জাল দলিল (সাটিফাইড কপি) প্রস্তুত করিয়া সম্পত্তি হস্তান্তরের দলিল করার চেষ্টা করে।
আদমদীঘি উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রার মুদাচ্ছির হাসানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমি কাগজপত্র যাচাই করে দেখেছি দলিলের সার্টিফাইড কপিটি জাল হওয়ায় আমি সম্পত্তির দাতা আব্দুর রহমান এবং দলিল লেখক রুহুল আমিন সহ ৮ জনের নামে মামলা দেই। তিনি আরোও জানান, এটি একটি অভিযোগ মাত্র। আমি চাই তদন্তের মাধ্যমে এর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হোক। আদমদীঘি সহকারি কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা সুলতানা কাগজপত্র সঠিক থাকায় নামজারি আবেদনটি মঞ্জুর করেছে এমন প্রশ্ন সাব-রেজিষ্ট্রারকে করলে তিনি বলেন, তার কোন সদোত্তর পাওয়া যায়নি।
এব্যাপারে আদমদীঘি সহকারি কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা সুলতানা বলেন, আমি ১৩৩০ (৯-১) ২৪-২৫ সনের নামজারি আবেদন যাচাই করে কাগজপত্র সঠিক থাকায় নামজারি আবেদনটি মঞ্জুর করা হয়েছে।