আদমদীঘিতে কর্মঘন্টা সমান, নারী শ্রমিকের মজুরী অর্ধেক
প্রকাশ : 2021-06-12 20:11:04১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
বগুড়ার আদমদীঘিতে একটি ইঁটভাটায় মাটি কাটার কাজ করে রোকেয়া বেগম (৩৭)। ট্রাকে করে ভাটায় আনা মাটি ডালিতে ভরে ভাটা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া তার কাজ। সকাল সাতটা থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় ১০ঘন্টা কাজ মজুরি মেলে ১৩০ টাকা। রোকেয়া বেগমের সাথে ওই ভাটায় মাটি কাটার কাজ করেন সামসুল আলম (৪২)। একই কাজ করে তাঁর মজুরি ৪০০ টাকা। দীর্ঘসময় কাজ করেও কম মজুরি ও বৈষম্যের এমন চিত্র বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার বেশিরভাগ ইটভাটায়। পুরুষের সঙ্গে সমান কাজ করেও নারীদের মজুরি প্রায় তিন গুন কম। এ নিয়ে তাঁরা কখনো আপত্তি করেন না বলে দাবি ভাটার মালিকদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,এই উপজেলায় নারী শ্রমিকদের মজুরির এ বৈষম্যের চিত্র শুধু ইটভাটাতে নয়, কৃষি, খেতখামার, বাড়ি নির্মাণে, কলখারখানাতেও। বছরের পর বছর নারীরা এই বৈষম্যের মধ্যে কাজ করছে।
আদমদীঘি উপজেলার শাঁওইল বাজার ঘিরে গড়ে উঠেছে কয়েকশত তাঁত কারখানা। ঝুট কাপড় থেকে রং আলাদাসহ কম্বল তৈরির কাজে যুক্ত কয়েক শ নারী ও পুরুষ শ্রমিক। শাঁওইলের সুতার আড়ত কিংবা তাঁত কারখানায় একজন পুরুষ শ্রমিক কাজ করে মজুরি পান ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। অথচ একই কাজ করে নারী শ্রমিক খোরশেদা বেগম(৪৫)। সে মজুনি পান প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। খোরসেদা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী সুজন আলী পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। বাড়িতে দুটি মেয়ে আছে। স্বামীর একার উপার্জনে সংসার ঠিকমত চলে না। ১০ বছর আগে ৪০ টাকা মজুরিতে এখানে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে ১৮০ টাকা পেলে খাওয়া, যাতায়াত বাদ দিয়ে দিনে শ খানেক টাকা হাতে থাকে।
খাদ্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত আদমদীঘিতে রয়েছে ৭০/৮০টি চালকল। এসব চালকলে কাজ করেন কয়েক হাজার শ্রমিক। কাজ ভেদে চাতাল বা চালকলেও পুরুষ শ্রমিকদের মজুরির তুলনায় নারী শ্রমিকরা কম মজুরি পায়। বাড়ি নির্মাণ শ্রমিকদের ক্ষেত্রেও পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় নারী শ্রমিকরা কম মজুরি পায়।
এ বিষয়ে নারী নেত্রী এ্যাঃড মিনা বেগম বলেন, নারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের যত দিন দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতার পরিবর্তন না হবে, ততদিন এভাবে শোষণ ও বৈষম্যের শিকার হতেই থাকবে। একই কর্মঘন্টা কাজ করে পুরুষেরা যেখানে ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা মজুরী পান, সেখানে একই পরিশ্রম দিয়ে নারীরা কম পাবে কেন? বৈষম্য ঘোচাতে নারীদের প্রতিবাদী হতে হবে, সমান মজুরী আদায়ে সোচ্চার হতে হবে।