আজ পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসব

প্রকাশ : 2024-01-14 11:50:53১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

আজ পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসব

বর্তমানে সাকরাইন শব্দটির সাথে অনেকেই পরিচিত। সাধারণত পুরান ঢাকায় ঐতিহ্য হিসেবে সাকরাইন একটি উৎসব। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও উন্নত যোগাযোগের কারণে সারা বাংলাদেশে এটি এখন জনপ্রিয় উৎসব। 

সাকরাইন উৎসব, মূলত বাঙালি মুসলমানদের পৌষসংক্রান্তি, ঘুড়ি উৎসব নামেও পরিচিত, বাংলাদেশে শীত মৌসুমের বাৎসরিক উদ্‌যাপন, ঘুড়ি উড়িয়ে পালন করা হয়। সংস্কৃত শব্দ 'সংক্রান্তি' ঢাকাইয়া অপভ্রংশে সাকরাইন রূপ নিয়েছে। পৌষ ও মাঘ মাসের সন্ধিক্ষণে, পৌষ মাসের শেষদিন সারা ভারতবর্ষে সংক্রান্তি হিসাবে উদযাপিত হয়। তবে পুরান ঢাকায় পৌষসংক্রান্তি বা সাকরাইন সার্বজনীন ঢাকাইয়া উৎসবের রূপ নিয়েছে। বর্তমানে দিনভর ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও রঙবেরঙ ফানুশে ছেয়ে যায় বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী শহরের আকাশ। এক কথায় বলা যায় সাকরাইন হচ্ছে এক ধরনের ঘুড়ি উৎসব। বাংলা বর্ষপঞ্জিকার নবম মাস পৌষ মাসের শেষ দিনে আয়োজিত হয় যা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জিকার হিসেবে জানুয়ারি মাসের ১৪ অথবা ১৫ তারিখে পড়ে। বাংলায় দিনটি পৌষ সংক্রান্তি এবং ভারতীয় উপমহাদেশে মকর সংক্রান্তি নামে পরিচিত।

বাংলাদেশের প্রাচীন উৎসব সমূহের মধ্যে পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসব অন্যতম। যদিও এটা সমগ্র বাংলাদেশব্যাপী পালিত হয় না কিন্তু খুব জনপ্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশি সংস্কৃতি। এটাকে ঐক্য এবং বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।

ঢাকা শহরে উৎসবমুখর পরিবেশে সাকরাইন উৎসব পালন করা হয়। মূলত পুরান ঢাকার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাতে বেশি জমজমাট ভাবে উদযাপিত হয় পৌষসংক্রান্তি তথা সাকরাইন। শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, গোয়ালনগর, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, লালবাগ ও এর আশেপাশের এলাকাগুলোতে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে ছোট, বড় সকলেই মেতে উঠে এ উৎসবে। বিকেল বেলা এই সব এলাকায় আকাশে রঙ বেরঙের ঘুড়ি ওড়ে। ছাদে কিংবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘুড়ি ওড়ানো হয়। অধিকাংশ সময়ে ভোঁ কাট্টা'র (ঘুড়ি কাটাকাটি) প্রতিযোগিতা চলে। একজন অপরজনের ঘুড়ির সুতা কাটার কসরৎ করে।

রাত নামলে পুরান ঢাকার আতশবাজির আলোয় উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। আগুন মুখে নিয়ে খেলা দেখানো কসরৎবিদগণ ছাদে দাঁড়িয়ে দর্শকদের তাদের কারুকাজ দেখায়। সন্ধ্যার পর আকাশে ওড়ে রঙবেরঙা ফানুশ ও ঘরে ঘরে পিঠাপুলির আয়োজন।

পুরাণ ঢাকা ঘুরে দেখা যাচ্ছে ছাদে ছাদে উৎসবের আমেজ। কেউ ঘুড়ি আনতে ব্যস্ত কেউবা সুতা পেচাতে, ছাদ সাজানো হচ্ছে রঙিন বেশে। রাস্তায় কিছু ভ্যানগাড়িতে দেখা যাচ্ছে সাউন্ড বক্স ও ডিজে মেশিনের আনাগোনা। বাজার ঘুড়ে দেখা যাচ্ছে অস্থায়ী ঘুড়ির দোকান। বিকালে দেখা মিলবে আকাশ রঙিন ঘুড়িতে ছেয়ে গেছে।

সম্প্রতি এই সুন্দর উৎসবকে নিয়ে কিছু বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী উৎসবের মধ্যে অপসংস্কৃতি ভর করছে বলে মনে করেন অনেকে। কিছু কিছু মহলে ঘুড়ি ওড়ানোর নামে চলছে নেশাদ্রব্য সেবন, অসঙ্গতিপূর্ণ কর্মকান্ড এবং উচ্চস্বরে সঙ্গীত বাজিয়ে পরিবেশ নষ্ট করা এবং আতশবাজি ফুটিয়ে বৃদ্ধ শিশু এবং পশুপাখির ক্ষতি সাধন করা। পুরান ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা আসাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, "আমরা ছোটবেলা থেকে সাকরাইন করে আসছি, এটা আমাদের গর্ব। আমরা আগে ঘুড়ি নিজেরা বানাতাম, ঘুড়ি মাঞ্জা থেকে শুরু করে সব নিজেরা করতাম সেটা ছিল অন্যরকম আনন্দ। কিন্তু বর্তমানে ছেলেমেয়েরা এর কিছুই বুঝেনা। অনেকে এটাও জানেনা যে সাকরাইনে ঘুড়ি ওড়াতে হয়। তারা সাকরাইন মানে বুঝে নেশাদ্রব্য, ডিজে, আতশবাজি। আমরা চাইনা উৎসবের নামে অপ্রীতিকর কোন ঘটনা হোক। আমাদের গার্ডিয়ানদের সচেতন হওয়া উচিত। এই সুন্দর ঐতিহ্য এভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়া দুঃখজনক।"

 

সান