আজ কবি শামসুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী
প্রকাশ : 2022-08-17 13:30:27১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম বরপুত্র, বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের ষোড়শ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৬ সালের আজকের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। রাজধানীর বনানী কবরস্থানে মায়ের কবরে সমাহিত করা হয় তাকে। কবি শামসুর রহমান বাংলা সাহিত্য নাগরিক কবি নামে পরিচিত। পঞ্চাশের দশকে দুই বাংলায় সমানভাবে পরিচিতি লাভ করেন।
কবি পুরনো ঢাকায় ২৩ অক্টোবর ১৯২৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন, তবে তার পৈত্রিক বাড়ি নরসিংদী । এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং তিন বছর নিয়মিত ক্লাস করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর মূল পরীক্ষা দেননি। ১৯৫৩ সালে পাস কোর্সে বিএ পাশ করে তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এমএ (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলেও শেষ পর্বের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের উপর ছদ্মনামে কবিতা প্রকাশ করেন। তিনি পেশায় ছিলেন সাংবাদিক । পরবর্তীতে বিভিন্ন সম্পাদনার কাজে নিযুক্ত ছিলেন। তিনিই প্রথম আধুনিক সাহিত্যের সাথে পরিচয় করান। যেমন- সিন্দাবাদ, চক্ষুষ্মান, লিপিকার, নেপথ্যে,জনান্তিকে, মৈনাক।
শামসুর রাহমান স্বৈরশাসক আইয়ুব খানকে বিদ্রুপ করে ১৯৫৮ সালে সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকায় লেখেন 'হাতির শুঁড়' নামক কবিতা। বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যখন কারাগারে তখন তাকে উদ্দেশ্য করে লেখেন অসাধারণ কবিতা 'টেলেমেকাস' (১৯৬৬ বা ১৯৬৭ সালে)। ১৯৬৭ সালের ২২ জুন পাকিস্তানের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী রেডিও পাকিস্তানে রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্প্রচার নিষিদ্ধ করলে শামসুর রাহমান তখন সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা দৈনিক পাকিস্তান-এ কর্মরত থাকা অবস্থায় পেশাগত অনিশ্চয়তার তোয়াক্কা না করে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন যাতে আরও স্বাক্ষর করেছিলেন হাসান হাফিজুর রহমান, আহমেদ হুমায়ুন, ফজল শাহাবুদ্দীন। ১৯৬৮ সালের দিকে পাকিস্তানের সব ভাষার জন্য অভিন্ন রোমান হরফ চালু করার প্রস্তাব করেন আইয়ুব খান যার প্রতিবাদে আগস্টে ৪১ জন কবি, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সংস্কৃতিকর্মী এর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন যাদের একজন ছিলেন শামসুর রাহমানও। কবি ক্ষুদ্ধ হয়ে লেখেন মর্মস্পর্শী কবিতা 'বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা'। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি গুলিস্তানে একটি মিছিলের সামনে একটি লাঠিতে শহীদ আসাদের রক্তাক্ত শার্ট দিয়ে বানানো পতাকা দেখে মানসিকভাবে মারাত্মক আলোড়িত হন শামসুর রাহমান এবং তিনি লিখেন 'আসাদের শার্ট' কবিতাটি। ১৯৭০ সালের ২৮ নভেম্বর ঘূর্ণিদুর্গত দক্ষিণাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় ও মৃত্যুতে কাতর কবি লেখেন 'আসুন আমরা আজ ও একজন জেলে' নামক কবিতা। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিবার নিয়ে চলে যান নরসিংদীর পাড়াতলী গ্রামে। এপ্রিলের প্রথম দিকে তিনি লেখেন যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় আক্রান্ত ও বেদনামথিত কবিতা 'স্বাধীনতা তুমি' ও 'তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা'।[৪] শামসুর রাহমান ১৯৮৭ সালে এরশাদের স্বৈরশাসনের প্রতিবাদে দৈনিক বাংলার প্রধান সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৮৭ থেকে পরবর্তী চার বছরের তিনি প্রথম বছরে 'শৃঙ্খল মুক্তির কবিতা', দ্বিতীয় বছরে 'স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে কবিতা', তৃতীয় বছরে 'সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কবিতা' এবং চতুর্থ বছরে 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কবিতা' লেখেন। ১৯৯১ সালে এরশাদের পতনের পর লেখেন 'গণতন্ত্রের পক্ষে কবিতা'। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও জনমানুষের প্রতি অপরিসীম দরদ তার চেতনায় প্রবাহিত ছিল। শামসুর রাহমানের বিরুদ্ধে বারবার বিতর্ক তুলেছে কূপমণ্ডূক মৌলবাদীরা। তাকে হত্যার জন্য বাসায় হামলা করেছে। এতকিছুর পরও কবি তার বিশ্বাসের জায়াগায় ছিলেন অনড়।
কবি শামসুর রাহমান যেমন একজন কবি হিসেবে খ্যাতিমান তেমনি তার শিশুদের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা ছিল । একারণে তিনি শিশুদের জন্য লিখেছেন বেশ ক’টি বই। শিশুদের অনুষ্ঠান হলে তো কথাই নেই। শিশুদের অনুষ্ঠানে ছিল তার সরব উপস্থিতি।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালের ৩ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা প্রতিষ্ঠালাভের পর থেকে তিনি এই সংস্থার বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজে পরামর্শ দিয়ে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে সংগঠনকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এই কথাসাহিত্যিক।