আক্রান্তদের ৮২% ওমিক্রন, ডেল্টা ১৮%, দাপট ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে কমবে, আশা বিএসএমএমইউ’র
প্রকাশ : 2022-02-10 15:38:47১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের দাপট কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো শারফুদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিএসএমএমইউ’র জিনোম সিকোয়েন্সিং রিসার্চ প্রজেক্টের চলমান গবেষণার ফলাফল কার্যক্রম তুলে ধরার সময় তিনি এমন মন্তব্য করেন। অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, যারা মারা যাচ্ছেন তাদের মৃত্যুর কারণ প্রধানত ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট এবং কোমর্বিডিটি।
গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২১ সালের ২৯ জুন থেকে এই বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত সারা দেশব্যাপী রোগীদের উপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। এই গবেষণায় বাংলাদেশের সকল বিভাগের রিপ্রেজেন্টেটিভ স্যাম্পলিং করা হয়েছে। গবেষণায় মোট ৯৩৭টি কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগীর ন্যামোফ্যারিনজিয়াল সোয়াব স্যাম্পল থেকে নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়। এবং জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের সঙ্গে রোগীর তথ্য-উপাত্তের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়।
তিনি জানান, বিএসএমএমইউ’র গবেষণায় ৯ মাস থেকে শুরু করে ৯০ বছরের বয়স পর্যন্ত রোগী অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে বর্তমানে ৩০ থেকে ৫৯ বছর বয়সের রোগীদের সংখ্যা বেশি। শিশুদের মধ্যেও কোভিড সংক্রমণ পাওয়া গেছে। পুরুষ ও নারীদের আক্রান্তের হার প্রায় সমান সংখ্যক ৪৯% পুরুষ ৫১% নারী। কোভিড আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের কোমর্বিডিটি রয়েছে, যেমন- ক্যান্সার, উচ্চরক্তচাপ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস তাদের রোগের প্রকটতা বেশি।
কোভিড-১৯ এর জিনোম সিকোয়েন্সিং বিশ্লেষণ গবেষণায় ২০২১ সালের জুলাইয়ে দেখা যায় যে, মোট সংক্রমণের প্রায় ৯৮ শতাংশ ছিল ইন্ডিয়ান বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। ১ শতাংশ হয়েছিল সাউথ আফ্রিকান বা বেটা ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা সংক্রমণ, ১ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে আমরা পেয়েছিলাম মরিশাস ভ্যারিয়েন্ট বা নাইজেরিয়ান ভ্যারিয়েন্ট। গত বছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জিনোম সিকোয়েন্সয়ে প্রাপ্ত ডাটা অনুযায়ী ৯৯ দশমিক ৩১ শতাংশ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট, একটি করে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন আলফা বা ইউকে ভ্যারিয়েন্ট এবং বেটা বা সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট এবং অন্য একটি স্যাম্পলে শনাক্ত হয় 20B ভ্যারিয়েন্ট যা একটি ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট। আমাদের গবেষণায় প্রধানত ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে ডেলটার ৮টি সাব-ভ্যারিয়েন্ট পর্যবেক্ষিত হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ৮ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগৃহীত স্যাম্পলের ২০ শতাংশই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ছিল। এ সময় ওমিক্রনের মাত্র একটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট BA.1 পেয়েছিলাম এবং ৮০ শতাংশ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যায়। সেসময়ে আমরা পরবর্তী মাসে এই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট গুণিতক হারে বৃদ্ধির আশংকা ব্যক্ত করেছিলাম। ৯ জানুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সর্বমোট ভর্তি রোগী এবং বহির্বিভাগ রোগীর মধ্যে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ৮২ শতাংশ এবং ১৮ শতাংশ ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছি। এই সময়ে ওমিক্রনের তিনটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট পরিলক্ষিত হয়েছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, BA.2 বেশি সংক্রামক। ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে অনেক বেশি সংক্রামক। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট জিনোমে ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি মিউটেশন পাওয়া গেছে, যার বেশির ভাগ ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে হয়েছে। এই স্পাইক প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে বেশির ভাগ ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়ে থাকে। স্পাইক প্রোটিনের গঠনগত বদলের জন্যই প্রচলিত ভ্যাকসিনেশনের পরেও ওমিক্রন সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যায়।
বিএসএমএমইউ'র গবেষণার পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট এখন বাংলাদেশের কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রধান উৎস যেটি কিছুদিন পূর্বে ডেলটা ছিলো। ওমিক্রন আক্রান্ত রোগীর দুই ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া ছিলো। এতে এটা প্রমাণ করে যে, ভ্যারিয়েন্ট নয় টিকা নেওয়ার জন্য রোগের তীব্রতা কম হয়েছে। তৃতীয়বারের মত আক্রান্ত হয়েছে এরকম রোগীরও ওমিক্রন পাওয়া গেছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর জিনোম সিকোয়েন্স করে ৬৫% এর ওমিক্রন এবং ৩৫% এর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। মৃদু উপসর্গের কারণে ওমিক্রন রোগীদের থেকে দ্রুত সংক্রমণ প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট থেকে কম মাথাব্যথা এবং সর্দির মত উপসর্গ হয়। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তির সম্ভাবনা কম।