আওয়ামীলীগেই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ
প্রকাশ : 2021-06-23 08:00:56১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
আজ ঐতিহাসিক ২৩ শে জুন। ২৩ শে জুনের সাথে মিশে আছে বাংলার বিষাদ এবং সংগ্রামের ইতিহাস। ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন পলাশীর প্রান্তরে বাংলার তোষামোদকারী এবং ক্ষমতালিপ্সু মির্জাফর ও তার দোসরদের কটূচালে ব্রিটিশ উপনেবিশিক শক্তির কাছে পরাজিত হয় বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দোলা। তিমিরে হারায় বাংলার মানুষের স্বাধীনতা। ১৯০ বছরের পরাধীনতা বরণ করে বাংলাসহ সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশ। ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট জন্ম নেয় পাকিস্তান এবং ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে দেশ ভাগ হওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও জিন্নার ষড়যন্ত্র হাজার মাইল দূরে অবস্থিত বাংলা এবং পশ্চিম পাকিস্তান মিলে গঠিত হয় পাকিস্তান রাষ্ট্র। সংস্কৃতি, ইতিহাসে ন্যূনতম মিল না থাকলেও কেবলমাত্র ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকিস্তান রাষ্ট্র। স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক হয়েও পূর্ব বাংলার আপামর জনগন নাগরিক অধিকার ভোগ করা থেকে বঞ্চিত হয়। বাংলার জনগণকে আবদ্ধ করার চেষ্টা করা হয় উপনেবিশিক শাসনের শিকলে।
পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকেরা পাকিস্তানের সিংহভাগ জনগণের ভাষা বাংলাকে নিয়ে লিপ্ত হয় গভীর ষড়যন্ত্রে। মাত্র তিন শতাংশ মানুষের মুখের ভাষা উর্দুকে করতে চায় সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। বৈষম্য ও শোষণের অঙ্কুর প্রস্ফুটিত হয়। বাংলার মানুষের ভাগ্যাকাশে যখন বৈষম্য ও শোষণের মেঘ ঘনীভূত হচ্ছিল তখন বাংলার মানুষের অধিকারের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য মাওলানা ভাষানী, শামসুল হক এবং তরুণ নেতা মুজিবকে নিয়ে ১৯৪৯ সালের ২৩ শে জুন পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠা পায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। মাওলানা ভাষানী সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং তরুণ নেতা শেখ মুজিব হন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামীলীগ জন্মলগ্ন থেকেই বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ে রাজপথে অবস্থান নেয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সাংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা, ১৯৫৮ সালের আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখল প্রতিরোধ, ১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ম্যাগনাকাটা ছয় দফা প্রণয়ন, ১৯৬৮ সালের প্রহসনমূলক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাসহ সকল আন্দোলনে বাংলাদেশের মানুষকে নেতৃত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ জনগণের দল। নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য দাবি আদায়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সোচ্চার ছিল আওয়ামীলীগ। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে ১৯৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয়া হয়। দলীয় নেতৃত্বে পদপরিবর্তন হলেও দলটি সাধারণ জনগন দলটিকে আপন করে নিয়েছে সর্বদা। এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের ইতিহাসের সাথে অবিচ্ছেদ্য একটি নাম শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৯ সালে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, ১৯৫৩ সালে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, ১৯৫৭ সালে সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৬ সালে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিবুর রহমানের তার ৫৫ বছরের জীবনে বাংলার মানুষের ন্যায্য দাবির কথায় সোচ্চার হয়ে ৪ হাজার ৬৮২ দিন কারা ভোগ করেছেন, কয়েকবার মৃত্যুর সম্মুখিন হয়েছে কিন্তু জনগণের দাবি আদায়ের পথ থেকে পিছুপা হননি। শেখ মুজিবের সততা, নিষ্ঠা, সংগ্রাম, দেশপ্রেম তাঁকে শেখ মুজিব থেকে বানিয়েছে বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা, সর্বশেষ জাতির পিতা থেকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী। ১৯৪৯ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এবং শেখ মুজিবুর রহমানের পথ চলা এক ও অভিন্ন। ১৯৭১ সালে আওমীলীগের নেতৃত্বে বাংলার মানুষ পায় একটি স্বাধীন ভূখন্ড এবং লাল সবুজের কপোত। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারা প্রকোষ্ঠ থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ১০ জানুরায়ি স্বাধীন বাংলাদেশের মাটি স্পর্শ করেন বঙ্গবন্ধু। ভস্ম, বিধ্বস্ত বাংলাকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে নিয়োজিত করেন নিজেকে। দেশীয় কোলাবোরেটর এবং বিদেশি চক্রান্তকে মাথায় নিয়েই নিরলস কাজ করেছিলেন জাতির পিতা। সোনার বাংলা গড়ার ছন্দের পতন হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট ইতিহাসের বর্বরোচিত এক হত্যাকান্ডে। শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহেনা ব্যতিত বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সকল সদস্য নিহত হন। স্বাধীন বাংলাকে পাকিস্তানের প্রেতাত্মা পাকিস্তানের মত মৌলবাদী দেশে রূপান্তরিত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা করে। বাঙ্গালি জাতিয়তাবাদকে ধ্বংস করতে চায়।
বাংলাদেশের যখন চরম দুর্দশা, অর্থনীতি যখন সম্পূর্ণ ভঙ্গুর, সেনা শাসকেরা যখন বাংলার গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করেছে তখন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে তার জ্যেষ্ঠ কনা জননেত্রী শেখ হাসিনা মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ ই মে দেশে ফেরেন। পরিবারের সবাইকে হারানো শেখ হাসিনা আপন করে নেন বাংলার সাধারণ জনগণকে। ১৯৮১ সালেই আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে হাল ধরেন শেখ হাসিনা। রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ হলেও তাঁর শরীরে শেখ মুজিবের রক্ত বহমান। তাই বাংলার মানুষকে আপন করে নিতে সময় নেননি। সেনা শাসকদের নির্মূল করতে সংগ্রামী ভূমিকা পালন করেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালে পান দেশ গড়ার সুযোগ। ক্ষমতায় এসেই কলঙ্কিত ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেন। গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি সম্পন্ন করেন। শুরু হয় সোনার বাংলা নির্মানের কাজ। ধাপে ধাপে অর্জিত হতে থাকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। বিধি বাম, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসে জামাত-বিএনপি জোট। বাংলাদেশকে আফগানিস্তানের মত ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে সকল চেষ্টা অব্যাহত রাখেন খালেদা জিয়ার সরকার। দুর্নীতিকে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ভিন্ন ধর্মের মানুষদের অত্যাচার, গুম, খুন আর অর্থ পাচারে বাংলাদেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায়। এরপরেই আসে প্রহসনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিএনপি সরকার ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনার জীবননাশের পরিকল্পনায় ব্যর্থ হয়। জনগনের দোয়া ও ভালবাসায় প্রাণে রক্ষা পান শেখ হাসিনা। তত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাসের জঘন্য নেশায় মাতে। সকল অপচেষ্টাকে সমূল উৎপাটন করে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামীলীগ সরকার।
২০০৮ সাল থেকেই বদলে যেতে থাকে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র। হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যায়িত বাংলাদেশ আজ বিশ্ব উন্নয়নের রোল মডেল। টানা একযুগ দেশের ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ সরকার। দেশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। বিএনপি সরকারের ৫০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের দুরাবস্থা থেকে বাংলাদেশ আজ ২৪,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। ফলে বদলে গেছে গ্রামীণ অর্থনীতি। ২০০৫ সালে দেশের দারিদ্র্য মানুষের সংখ্যা ছিল শতকরা ৪১.৫ শতাংশ ২০১৯ সালে যা ২০.৫ শতাংশে নেমে আসে আর চরম দারিদ্র্যের হার নেমে আসে ১০.৫ শতাংশে। ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যকে নির্মূলের পরিকল্পনা করেছে শেখ হাসিনার সরকার। বাংলাদেশে আজ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হচ্ছে। প্রমত্তা পদ্মার বুকে পদ্মা সেতু আজ সম্পন্ন। কর্নফুলীর পাতাল ফুড়ে এগিয়ে চলছে টানেল নির্মাণের কাজ। দেশে মহাসড়কের উন্নয়ন সহ গ্রামীণ সড়কের উন্নয়ন হয়েছে ব্যাপক। মহাকাশে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে উন্নয়নের সাক্ষ্য দিচ্ছে বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট। এই ছোট কলামে বাংলার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা সম্ভব নয়। ঢাকায় নির্মিত হচ্ছে মেট্রোরেল, পাতাল রেলের কাজ শুরু হবে আগামী বছর। দ্রুত এগিয়ে চলছে বাস রেপিড সার্ভিসের কাজ। ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরি করে আওয়ামীলীগ সরকার। আজ ডিজিটাল সুবিধা ভোগ করছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। দেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি পার হয়েছে ২০১৯ সালে। দেশের ৯৯ ভাগ মানুষ আজ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর মাধ্যমে মুজিব বর্ষে লক্ষাধিক মানুষ মানসম্মত ঘর পাচ্ছে। জলবায়ুর বিরূপতা নিরসনে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ গ্রহণ করেছে সরকার। দেশকে উন্নত এবং সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তর করতে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা রূপকল্প-২০৪১ গ্রহণ করেছে সরকার। দেশের জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির ঘোষণা দিয়েছে সরকার যা ২০৩০ সালের মধ্যেই বাস্তবায়িত হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে পাল্লা দিতে ফ্রি ট্রেনিং করাচ্ছে আই সি টি মন্ত্রণালয় এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। আওয়ামীলীগ সরকারের নেতৃত্বে ২০১৫ সালে আই এম এফ এর ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয় এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে জাতিসংঘের উন্নয়নশীল দেশের সারিতে পদার্পণ করে। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের তিনটি সূচকে উন্নীত হয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এশিয় উন্নয়ন ব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। চীন, রাশিয়া, আমেরিকা, জাপানের মত উন্নত দেশ আজ বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে আগ্রহী। বিশ্বের অন্যতম ব্যাংক এইচএসবিসিএর মতে বাংলাদেশ ২০৩১ সালেই বিশ্বের ২৪ তম অর্থনীতির দেশে রূপান্তরিত হবে।
করোনায় যখন সমগ্র বিশ্ব এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষতির মুখে সেই ২০২০ সালেই বাংলাদেশে ধনাত্মক প্রবৃদ্ধি প্রত্যক্ষ করেছে। সরকার ঘোষিত প্রণোদনা অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। করোনা মোকাবিলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব দরবারে সাহসী নেত্রীর খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এই দুর্বার অর্জনকে কিছুটা হলেও ম্লান করে দিচ্ছে সরকারদলীয় কিছু নেতা, মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি এবং প্রসাশনের আমলা। আওয়ামীলীগ সরকার এদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিবে এবং শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আগাম উন্নয়নে নেতৃত্ব দিবে। প্রগতি এবং সমৃদ্ধির দিকে অগ্রসর হবে বাংলাদেশ, এই প্রত্যাশাই কেবল জড়িয়ে আছে কোটি বাঙ্গালির হৃদয়ে।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ।