আইনজীবীদের ১০ ভাগ মামলা ফ্রিতে করা উচিত : প্রধান বিচারপতি
প্রকাশ : 2021-06-29 21:24:59১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, আইন পেশা একটি সেবামূলক পেশা। আইনজীবীদের অন্তত শতকরা ১০ ভাগ মামলা ফ্রিতে (বিনামূল্যে) করে দেয়া উচিত।
সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে একটি মামলার ভার্চুয়াল শুনানিতে প্রধান বিচারপতি আজ এ মন্তব্য করেন।
সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বিষয়ে মামলার শুনানিকালে আসামিপক্ষে যুক্ত ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এডভোকেট মুনসুরুল হক চৌধুরী। এই মামলায় নিয়োজিত এডভোকেট অনরেকর্ড (এওআর) সময়মতো আদালতে ভার্চুয়ালি যুক্ত না থাকায় মামলা শুনানি করা যাচ্ছিল না। এ প্রেক্ষাপটে এ মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। এ সময় আপিল বিভাগে আরও আইনজীবী ও সংবাদ কর্মি যুক্ত ছিলেন।
এ সময় আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতি বছর আইনজীবীদের সনদ নতুন করে নবায়ন করতে হয়। এই সনদ নবায়নের সময় দেখাতে হয় তিনি কতটি মামলা প্র-বোনো (বিনা ফিতে) করেছেন। এটা দেখাতে না পারলে সিনিয়র আইনজীবীদেরও লাইসেন্স নবায়ন করা হয় না।
এসময় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এটি আমাদের এখানে হলে ভালোই হতো। আমরাও এটা করতে চাই। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা করা যায়।’
তখন আদালতে যুক্ত হন সংশ্লিষ্ট মামলার এডভোকেট অন রেকর্ড নুরুল ইসলাম চৌধুরী। সময়মতো যুক্ত হতে না পেরে তিনি আদালতের কাছে ক্ষমা চান।
প্রধান বিচারপতি আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনাদের অন্তত ১০ শতাংশ মামলা ফ্রিতে করা উচিত (অসচ্ছল বিচারপ্রার্থীদের)। এটা অবশ্যই পালনীয় কর্তব্য। আইন পেশা সেবামূলক পেশা। আগে তো আইনজীবীরা ফি নেয়ার সময় টাকাও দেখেন নাই। গাউনের পেছনের পকেটে টাকা ঢুকিয়ে দিত। কিন্তু এখন আইন পেশা একটি ব্যবসা হয়ে গেছে।
রাষ্ট্র নিযুক্ত (যারা আইনজীবী রাখতে পারে না, তাদের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়) আইনজীবীদের সম্মানী বাড়ানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি।
এটি কি ছেলেখেলা নাকি?
এর আগে ‘নুর আলম বনাম রাষ্ট্র’ নামে কার্যতালিকার ৫ নম্বরে থাকা ফৌজদারি আপিল শুনানির জন্য ডাকা হয়। তখন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হিসেবে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী যুক্ত ছিলেন না। এই মামলায় আপিলকারীর পক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হিসেবে আইনজীবী মো. নূরুল ইসলাম চৌধুরীর নাম দেখা যায়।
পরে ওই আইনজীবী যুক্ত হয়ে এক সপ্তাহ সময় প্রার্থনা করেন। একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, অ্যাডভোকেট অন রেকর্ডদের কোনো দায়িত্ব আছে বলে মনে হয় না।
ওই আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘মামলায় আইনজীবী হিসেবে আপনার নাম আছে। নাম প্রত্যাহার করার আগপর্যন্ত আপনি মামলার আইনজীবী। নিত্যদিনই এই রকম ঘটনা ঘটছে। অ্যাডভোকেট অন রেকর্ডের নাম থাকে, আদালতে উপস্থিত হয় না। এটি কি ছেলেখেলা নাকি?’
একপর্যায়ে ওই আইনজীবী ক্ষমা প্রার্থনা করে আবার এক সপ্তাহ সময়ের আরজি জানান। আদালত বলেন, ‘মক্কেল নির্দেশ দিয়েছে বলেই তো মামলা ফাইল করেছেন। নির্দেশ না থাকলে দরখাস্ত দিয়ে বলবেন, নির্দেশনা নেই, মামলা নন–প্রসিকিউশন করব। রেকর্ড দেখে ডিসমিস করে দেওয়া হবে।’