অলিম্পিকের আয়োজন নিশ্চিত করতে টোকিওতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা

প্রকাশ : 2021-07-09 11:16:47১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

অলিম্পিকের আয়োজন নিশ্চিত করতে টোকিওতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগা বলেছেন, রাজধানী টোকিওতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় আবারও জরুরি অবস্থা ঘোষণার সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে। সোমবার থেকে কার্যকর হতে যাওয়া জরুরি অবস্থা আগস্ট মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত বহাল থাকবে। আসন্ন অলিম্পিকের আয়োজনকে ঘিরে যেন সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়, তা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নিল জাপান। বৃহস্পতিবার এক প্রজ্ঞাপনে এই ঘোষণা দেয় জাপান সরকার।

এবার নিয়ে জাপান সরকার চতুর্থবারের মতো টোকিওসহ এবং অন্য কয়েকটি জেলায় করোনাভাইরাস সামাল দেওয়ার উদ্দেশ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করল। জাপানের প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে ভাইরাস সংক্রমণ কার্যকরভাবে সামাল দেওয়ার মধ্যে দিয়ে নাগরিক জীবন সুরক্ষার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, টোকিও অলিম্পিক ঐতিহাসিক অলিম্পিক হয়ে উঠবে।

সর্বশেষ এই জরুরি অবস্থার অর্থ এ রকম হতে পারে যে অলিম্পিকের সব কটি ভেন্যুতে দর্শক উপস্থিতি ছাড়াই হয়তো বিভিন্ন প্রতিযোগিতা চলবে। তবে সেই সিদ্ধান্ত জাপান সরকারের একার নয়, অলিম্পিক আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভিন্ন পক্ষেরও এখানে করণীয় আছে। কিছুটা নিয়ন্ত্রিত জাপানের সর্বশেষ এই জরুরি অবস্থা টোকিওর পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী তিনটি জেলা—কানাগাওয়া, সাইতামা ও চিবা এবং সেই সঙ্গে পশ্চিম জাপানের ওসাকাতেও সম্প্রসারিত হবে। আজ বিকেলে সরকারের করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে নিয়েছেন।

সীমিত বা নিয়ন্ত্রিত জরুরি অবস্থার আওতায় রেস্তোরাঁ, পানশালাসহ বিনোদনের অন্যান্য জায়গা খোলা রাখার সময় বেঁধে দেওয়া হবে। মদজাতীয় পানীয় নির্দিষ্ট সময়ের পর পরিবেশন করা যাবে না। অলিম্পিকের বিভিন্ন ইভেন্টে বিদেশের দর্শক সমাগম নিষিদ্ধ হওয়ায় জাপানের রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে বিদেশি পর্যটক এমনিতেই দেখা যাবে না। ফলে বিনোদন ব্যবসা চালু রাখার সময় সীমিত হওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানকে লোকসানের অঙ্ক এমনিতেই আগে থেকে গুনতে হচ্ছে। ব্যবসায়িক সেই ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার একটি পথও সরকারের পাশাপাশি টোকিওর নগর প্রশাসনের ঠিক করে নেওয়ার কথা।

জরুরি অবস্থার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করলেও অলিম্পিকের ভেন্যুতে দর্শক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। যদিও সাধারণভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে অলিম্পিক শেষ পর্যন্ত দর্শকশূন্য ভেন্যুতেই অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রায় দুই সপ্তাহ আগে আজ টোকিও এসে পৌঁছেছেন। টোকিওর উদ্দেশে যাত্রা শুরু করার আগে কয়েক দিন ধরে সুইজারল্যান্ডে তিনি স্বেচ্ছাবিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিলেন এবং নিয়মিতভাবে করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন। দর্শকসংক্রান্ত নীতি ঠিক করে নিতে আজ পরবর্তী সময়ে তাঁর টোকিও অলিম্পিকের আয়োজক কমিটির প্রধান ও অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হওয়ার কথা।

অলিম্পিকের বিভিন্ন ভেন্যুতে দর্শক প্রবেশের ওপর ঢালাও নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হলেও খেলাধুলার সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য কর্মকর্তা, আয়োজক এবং বিভিন্ন জাতীয় দলের কর্মকর্তা ও নেতাদের মধ্যে কতজনকে স্টেডিয়ামে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে, সেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও এখন বিভিন্ন পক্ষের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। শূন্য স্টেডিয়ামের অর্থ একেবারে শূন্য কখনো বোঝাবে না।

তবে এ সবকিছুর বাইরে অন্য যে একটি প্রশ্ন অনেকেই করছেন তা হলো, এ রকম বিতর্ক ও সেই সঙ্গে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাওয়া অলিম্পিকে এর যাঁরা মূল আকর্ষণ, অর্থাৎ ক্রীড়াবিদেরা তাঁদের পারদর্শিতা সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারবেন কি না। নতুন কোনো রেকর্ড টোকিও ২০২০-তে হবে কি না, তা এখন দেখার অপেক্ষায়।

এদিকে টোকিওতে সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার ঊর্ধ্বগতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। গতকালের দৈনিক হিসাব ৯২০টি নতুন সংক্রমণের পর আজ বৃহস্পতিবার জাপানের রাজধানীতে ৮৯৬টি নতুন সংক্রমণ নিশ্চিত করেছে টোকিও মেট্রোপলিটন সরকার। ফলে অলিম্পিক নিয়ে উদ্বেগের কোনো শেষ এখনো দেখা না গেলেও আয়োজকদের সবাই মনে হয় শেষ পর্যন্ত দর্শক উপস্থিতি ছাড়া খেলাধুলা আয়োজনের ধারণা শেষ পর্যন্ত মেনে নিচ্ছেন। তবে এর বাইরে আর কোনো ছাড় দিতে এরা যে নারাজ, তা ক্রমশই স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অর্থাৎ যেকোনো উপায়েই হোক না কেন, অলিম্পিক অবশেষে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

এদিকে সংক্রামক ব্যাধির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া ডেলটা ধরনের ভাইরাস ইতিমধ্যে জাপানে এসে উপস্থিত হওয়ায় অলিম্পিককে কেন্দ্র করে, এমনকি ছোট আকারের সমাবেশও বিপদ বৃদ্ধি করে দিতে পারে। করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত জাপান সরকারের শীর্ষ উপদেষ্টা শিগেরু ওমি মনে করেন, অলিম্পিক আয়োজনের পাশাপাশি আগস্ট মাসের শুরু থেকে জাপানের গ্রীষ্মকালীন সনাতন ছুটি ও সেই সঙ্গে মারাত্মক ধরনের সংক্রামক হিসেবে চিহ্নিত ডেলটা ভাইরাস ভবিষ্যতে সংক্রমণ আরও ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। এ রকম ধারণার সঙ্গে একমত এখন অনেকেই পোষণ করছেন এবং তাঁরা মনে করছেন, প্রায় এক বছর ধরে স্থগিত রাখতে হওয়া ২০২০ টোকিও অলিম্পিক ও প্যারা অলিম্পিক জাপানের জন্য শেষ পর্যন্ত হয়তো দীর্ঘ মেয়াদে একটি বোঝায় পরিণত হতে পারে, প্রাপ্তির চেয়ে ঝুঁকির মাত্রা যেখানে হবে অনেক বেশি।