অর্থাভাবে মেডিকেল ভর্তি অনিশ্চিত কৃষকের ছেলে সামিউলের

প্রকাশ : 2021-04-08 20:19:41১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

অর্থাভাবে মেডিকেল ভর্তি অনিশ্চিত কৃষকের ছেলে সামিউলের

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস কোর্সের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাক্রমে ২৭০০ তম হয়ে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ বগুড়ায় ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার গাংগইট গ্রামের দরিদ্র কৃষক মোঃ সানোয়ারের হোসেনের ছেলে সামিউল ইসলাম। তিনি মেলেনিয়াম স্কলাস্টিক স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন।

ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে তিনি পেয়েছেন ৭০.৫ নম্বর। শিক্ষা জীবনজুড়েই আর্থিক দুশ্চিন্তা ছিল সামিউল ইসলামের  নিত্যসঙ্গী। মেধার জোরে এবং প্রিয় শিক্ষক শাহ আলম সহ অনেকের সহযোগিতায় সব বাধা জয় করে মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেলেও আবার সেই আর্থিক দুশ্চিন্তাই তাকে ঘিরে ধরেছে।

ভর্তির সুযোগ পেলেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। কোথায় পাবেন অর্থ, কে দেবেন অর্থের জোগান- এ শঙ্কায় দিন কাটছে দরিদ্র পরিবারের সামিউল ইসলামের।

 সামিউল ইসলাম বগুড়ার শিবগঞ্জ  উপজেলার কিচক ইউনিয়নের গাংগইট গ্রামের সানোয়ার হোসেন ও মোছাঃ নাজিরা বিবির ছেলে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সামিউল ইসলামের বাবা একজন দরিদ্র কৃষক  

বাড়িতে রয়েছে একটি ছোট টিনের ঘর। সেই একটি ঘরেই থাকেন পরিবারের সবাই। পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় সামিউল ইসলামের বাবার। মেডিকেলে ভর্তি ও পড়ার খরচ জোগানোর সামর্থ্য তার পিতার নেই। 

সামিউল ইসলামের বাবা বলেন, আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে দিনে যে দুই-তিনশত টাকা আয় হয় সেই টাকা দিয়েই কোনোরকম কষ্টে পরিবারের সবার মুখের আহার তুলে দেওয়াসহ সংসারের অন্যান্য খরচ চালাতে হয়। তাই সংসার চালানো যেখানে দায়, সেখানে ছেলের মেডিকেলে লেখাপড়ার খরচ চালানো আমার কাছে দুঃস্বপ্ন। তবে স্বপ্ন দেখি আমার ছেলে ডাক্তার হবে। কিন্তু টাকার অভাবে ছেলেকে ভর্তি করাতে পারবো কিনা জানি না।

সামিউল ইসলাম ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী, সে ধারিয়া-গাংগইট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পযর্ন্ত লেখাপড়া করে কিচক দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং বগুড়া সরকারি শাহসুলতান কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ছোট থেকেই তার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি অধিকাংশ সময়ই লেখাপড়ার পিছনে ব্যয় করেছেন। স্বপ্ন পূরণের এতো কাছে এসেও টাকার অভাবে স্বপ্ন ভেঙে যাবে তা মেনে নিতে পারছেন না সামিউল ইসলাম। সামিউল ইসলাম বলেন,  স্কুল-কলেজে পড়াশুনার সময় অর্থের অভাবে একসঙ্গে প্রয়োজনীয় সব বই কিনতে পারতাম না। একটা একটা করে বই কিনতাম। মন চাইলে একটা ভালো পোশাক কিনতে পারতাম না। কারণ আমার জন্ম গরিবের ঘরে। মা-বাবা খুশি হয়ে যা কিনে দিতেন, আমি তাতেই খুশি থাকতাম। স্কুল ও কলেজে পড়াশুনা করা অবস্থায় বিভিন্ন দিক দিয়ে সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় শাহ আলম স্যার। আর এজন্য স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি আরও বলেন, মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর এখন খুব চিন্তা হচ্ছে। মেডিকেলের বইয়ের দাম বেশি। বগুড়া মেডিকেলে পড়াশুনা করতে গিয়ে সেখানে থাকা-খাওয়াসহ অনেক খরচ হবে। এত টাকা আমার হতদরিদ্র বাবা কোথায় পাবে? কীভাবে পড়ালেখার খরচ চালাব বুঝতে পারছি না। আমার বাবার পক্ষে সেই খরচ চালানো সম্ভব না। তবে সবাই দোয়া করবেন আমি যেন একজন ডাক্তার হয়ে দেশের সেবা করতে পারি।