অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় নির্বাচন করার মত সক্ষমতা এখনো অর্জন করতে পারেনি  

প্রকাশ : 2025-09-13 17:19:33১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় নির্বাচন করার মত সক্ষমতা এখনো অর্জন করতে পারেনি  

আজ ১৩ই সেপ্টেম্বর জাতীয় ঐক্য জোটের উদ্যোগে রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নির্বাচন ও কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন শীর্ষক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় ঐক্য জোটের প্রধান সমন্বয়কারী আলহাজ্ব আলতাফ হোসাইন মোল্লার সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ মুসলিম সমাজের চেয়ারম্যান জাতীয় ঐক্য জোটের মুখপাত্র মোঃ মাসুদ হোসেনের পরিচালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। আমরা নির্বাচন চাই কিন্তু সেই নির্বাচন হতে হবে দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার পর। যদি জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া না হয় তাহলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জাতীয় ঐক্য কমিশনের ঘোষিত জুলাই সনদপত্রে স্বাক্ষর করবে কি না ভেবে দেখবে।

তিনি আরো বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের নির্বাচনের ফলাফল যদি ঘোষনা করতে তিন দিনের বেশি সময় লাগে তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে কত দিন সময় লাগতে পারে। এই সরকার এখনো জাতীয় নির্বাচন করার মত সক্ষমতা তৈরি করতে পারেনি। সরকারকে আগে দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে, তারপর জাতীয় নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করবে।

জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নায়েবে আমির এডভোকেট হেলাল উদ্দিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি একতরফা প্রশাসনের নির্বাচন মাগুরা নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। ৭২’র সংবিধান বাতিল করতে হবে। নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। দেশের সংস্কার ছাড়া কোন নির্বাচন হলে জনগণ সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না।

জাতীয় ঐক্য জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, দেশে এখনো জাতীয় নির্বাচনের কোন পরিবেশ তৈরি হয়নি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন তার জ্বলন্ত উদাহরণ। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রেজাল্ট যদি তিন দিনেও প্রকাশ করতে অক্ষম হয় তাহলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন করার আশা কিভাবে করে। আগে দেশের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। আর এই সংস্কারের জন্য প্রয়োজন সরকারের ভিত্তি সুপ্রিম কোর্টের রেফারেনডম এর মাধ্যমে আপৎকালীন সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম সরকার গঠনের এক মাসের ভিতরে অন্তর্বর্তীকালীন  সরকার ৭২ এর সংবিধান বাতিল করে গণভোটের মাধ্যমে সরকারের ভীত মজবুত করবে ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভিত্তি মজবুত করে দেশের সংস্কার করবে। জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার হত্যাকারীদের বিচার করবে। দুঃখের বিষয় সরকার সেখানে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদের নতুন দোসর একটি রাজনৈতিক দলের কাছে মাথা নত করে সংস্কার বাদ দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করেছে ও নামকাওয়াস্তে জুলাই সনদ এর একটি খসড়ার মুলা ঝুলিয়ে ছাত্র-জনতার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ করেছে। সরকার কে এই হীন মনমানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। অন্যথায় দেশের জনগণ নতুন করে জাতীয় ঐক্যমতে সরকার গঠন করে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন করবে।

জাতীয় সংলাপে অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন কে এম মোঃ আবু তাহের, দেশ প্রেমিক নাগরিক পার্টির চেয়ারম্যান আহসানুল্লাহ শামীম, গন আজাদী লীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আতাউল্লাহ খান, জাতীয় ঐক্য জোটের সমন্বয়কারী বাংলাদেশ ছাত্র জনতা পার্টির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোঃ বেলাল হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র সহকারি  সেক্রেটারি জেনারেল আহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ সংস্কার পার্টির নির্বাহী সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর আমিন আহমেদ আফসারী, এম ডি এম অর্গানাইজিং সেক্রেটারি ব্যারিস্টার শহিদুল আজিম, বাংলাদেশ ইসলামী দলের মহাসচিব জাতীয় ঐক্য যতের সমন্বয়কারী হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ ইসলামী সমাজতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুর রহমান, ডেমোক্রেটিক পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান, সুশীল ফোরামের সভাপতি মোহাম্মদ জাহিদ, বাংলাদেশ নিজাম ইসলাম পার্টি চেয়ারম্যান মাওলানা ওবায়দুল হক, ন্যাপ ভাসানী চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমেদ ভাসানী, ইসলামী জনকল্যাণ পার্টির মহাসচিব আনোয়ার হোসেন, জাতীয় ঐক্য জোটের সমন্বয়কারী নাজমুল হক, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম মজুমদার, একামতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা মুফতি মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বিন নূরী আল কাসেমী, বাংলাদেশ শ্রমজীবী পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন আব্দুল কাদের জিলানী, স্বাধীন পার্টি চেয়ারম্যান ডাক্তার সম্রাট শাহ জুয়েল চিশতী, জাতীয় ঐক্য জোটের সমন্বয়কারী দেলোয়ার হোসেন, সমন্বয়কারী বিএনজির চেয়ারম্যান আবু আহাদ নূর সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জাতীয় নেতৃবৃন্দ।

জাতীয় ঐক্যজোটের প্রস্তাবিত জুলাই সনদ:
১) জুলাই যোদ্ধাদের কোন রূপ বিচার, শাস্তি, তাদের কাজের জন্য তাদেরকে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করা যাবে না।
২) জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর কোন বিরুপ মতামত গ্রহণ করা যাবে না।
৩) জুলাই যোদ্ধাদের হত্যাকারীদের বিচার ও গুম ঘরে আটক, শাস্তি দান কারীদের বিচার ছাড়া নির্বাচন হতে পারবে না।
৪) জুলাই সনদের স্বীকৃতি দান না কারীদের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ ও রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না।
৫) জুলাই সনদ কোন নাগরিকই, সে রাজনীতিবিদ হোক বা প্রশাসনের কেউ হোক বা সেনাবাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ হোক, অমান্য করতে পারবেনা।
৬) জুলাই সনদে রাষ্ট্রীয় মুলনীতি বা আদর্শ নির্ধারণ করা হলো। যা ঃ ৯২% মুসলমানদের ধর্ম ইসলাম, ইসলামের সাম্য, সামাজিক ন্যায় বিচার, মানবাধিকার, ইসলামের প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস। সকল ধর্মের ভিত্তি ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল এবং গনতন্ত্র। সকল ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
৭) জুলাই বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী সকলেরই চাকরি বা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য সেবা, চিকিৎসা, শিক্ষা ও পারিবারিক ভাতা ইত্যাদির ব্যবস্থা রাষ্ট্র গ্রহন করবে।
৮) শাপলা হত্যাকান্ডের বিচার ও হেফাজতের দাবি সমূহ মানতে হবে।
৯) পিলখানা হত্যাকান্ডের ন্যায্য বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

রাষ্ট্র সংস্কারে জাতীয় ঐক্যজোটের দাবি সমূহ:
লগি বৈঠার তাণ্ডবে মানুষ হত্যা, ৫ই মে মতিঝিলের শাপলা চত্বর গণহত্যা, জুলাই-আগস্ট এর গণহত্যার বিচার। পুরাতন সংবিধান বাতিল। নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মেন্ডেড নেওয়া। জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেওয়া। নির্বাচন কমিশনের সংস্কার। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন ১৯৭২ এর ৯০ বি ধারা কালো আইন বাতিল। কালো টাকার মালিক পেশি শক্তি অস্ত্রধারী খুনী সন্ত্রাসী সাবেক দুর্নীতিবাজ আমলাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা। নির্বাচনী ব্যয় পোস্টার সভা সমাবেশ মিছিল নির্বাচনী প্রচারণা, পুলিং এজেন্ট নিয়োগ সংক্রান্ত সকল বিষয় ইত্যাদি সকল ব্যয় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বহন করতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদীয় আসন সংখ্যা থাকবে ৩০০। কোন উচ্চ কক্ষ নিম্ন কক্ষ প্রয়োজন নাই।  ৩০০ আসনে নির্বাচন হতে হবে আনুপাতিক হারে ভোটের মাধ্যমে। নির্বাচনে সকল দলকে সমান সুবিধা দিতে হবে। স্থানীয় নির্বাচনে কোন দলীয় প্রতীক থাকবে না। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক লোকবল দিয়ে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। সরকারি কোন ব্যক্তি রিটার্নিং কর্মকর্তা হতে পারবে না।